সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান
☣#কামারপুকুরের_সাদা_বোঁদের_কথা☣




                            "যদি কুমড়োর মত,
                                  চালে ধ'রে রত,
                           পানতোয়া শত শত।

                           আর, সরষের মত,
                                 হ'ত মিহিদানা,
                            বুঁদিয়া বুটের মত।।"



                      রজনীকান্ত সেনের কল্যানী কাব্যগ্ৰন্থের ঔদারীক গানে বাংলার বিভিন্ন প্রকার মিষ্টান্নের উল্লেখ করেছেন। এই গানে বুঁদিয়া বা বোঁদের উল্লেখ পাওয়া যায়।



                     বোঁদে শব্দটি সংস্কৃত শব্দ বিন্দুক থেকে উদ্ধৃত হয়েছে। বিন্দুক--বুঁন্দিয়া--বুরিন্দা--বুঁদিয়া থেকে তারপর বোঁদে শব্দটি এসেছে। সিন্ধ্রি তে নুক্তি বলা হয়। প্রাচীন সাহিত্যে এই বোঁদের উল্লেখ রয়েছে। প্রচীনকালে বিরিকলাই গুড়ো, আহৃত ঘি ও চিনি সহযোগে এই মিষ্টান্ন প্রস্তুত হত। সারা ভারতীয় উপমহাদেশে বোঁদের জনপ্রিয়তা রয়েছে। বিশেষত বাংলার বোঁদে স্বনামধন্য খ্যাতি রয়েছে।

 

                বর্তমানে বোঁদে চালগুড়ো ও বেসন য শিয়ে জল দিয়ে মেখে আধ-ঘন্টা রেখে দিতে হয়। তারপর ছানতা (ছিদ্রযুক্ত বাসন বিশেষ) র সাহায্যে ঘিয়ে ভাজতে হয়। তারপর জাফরাধ মিশ্রিত চিনির রসে রাখা হয়। তবে প্রচলিত লালচে বোঁদে ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গে হুগলী জেলার কামারপুকুর অঞ্চলে এক বিশেষ ধরনের সাদা বোঁদে পাওয়া যায়। যা গোটা ভারত উপমহাদেশে স্বনামধন্য খ্যাতি রয়েছে। এছাড়া হুগলী জেলার জনাই ও জয়রামবাটী তেও পাওয়া যায়। ইংল্যান্ডেও এই সাদা বোঁদের বেশ বেশ খ্যাতি রয়েছে।


              কামারপুকুরের সাদা বোঁদে র প্রনালির মূল উপাদান বরবটির দানাকে রোদে শুকিয়ে গুড়ো করা হয়। এই বরবটি গুড়োর সাথে আতপ চালগুড়ো মিশ্রণ করে জল দিয়ে মাখা হয়। তারপর গাওয়া ঘি'তে ভেজে চিনির রসে ডোবাতে হয়।


                 কামারপুকুরের সাদা বোঁদে কে কবে প্রথম প্রস্তুত করে তা অজানা। অন্তত আমি জানতে পারিনি। কামারপুকুর ও জয়রামবাটির কয়েকটি হাতে-গোনা পরিবার এই সাদা বোঁদে তৈরী করেন। তবে লোকশ্রুতিতে  বলা হয়েছে যে ১২০০ বঙ্গাব্দে অর্থাৎ ১৭৯৩ সালে মধূসুদন মোদক নামক এক জনৈক ব্যাক্তি এই সাদা বোঁদের প্রথম প্রস্তুত কারক। মধুসূদন মোদকের পুত্র দূর্গাদাস ছিলেন ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের বাল্যবন্ধু। ঠাকুরের ও মাতা সারদা দেবীর সাদা বোঁদে ছিল ভীষন প্রিয়।

                 কামারপুকুরে বর্তমানে মিষ্টির দোকানের সংখ্যা প্রায় তিরিশটি। সাদা বোঁদের প্রস্তুতকারক মোদকের বংশধরদের তিনটি দোকান রয়েছে। প্রত্যেকটি দোকানে আজও সাদা বোঁদে পাওয়া যায়। পর্যটকদের সময় দশ থেকে বারো টন সাদা বোঁদে বিক্রি হয়ে থাকে।


প্রতিবেদক; সায়ন দাস
📷মোহন দাস
 (সাংবাদিক, #আনন্দবাজার_পত্রিকা)


☯দ্রষ্টাব‍্য;
কোনো বই বা URL থেকে তথ‍্য নেওয়া হয়নি

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Krishna Igor sahitya sova

                                                           কৃষ্ণনগরের সাহিত্য সভা বাংলার মুসমানদের যুগের শেষের দিকে কৃষ্ণনগরের যুগ শুরু। এর প্রাচীন নাম ছিল "রেউই"। রাজা রাঘব মাটিয়ারি থেকে রেউই গ্রামে রাজধানী স্থানান্তরিত করেন। রাজা রাঘবের পুত্র রাজা রুদ্র রায়ের (খ্রি:-১৬৮৩-১৬৯৪) সময় থেকে কৃষ্ণনগরের উন্নতির ইতিহাস শুরু। রাজা রুদ্র রায় রেউই নাম পরিবর্তন করে "কৃষ্ণনগর" নাম রাখেন (১৬৮৯ খ্রি:)। রাজা রুদ্র রায়ের সময়ে প্রচুর গোপ বাস করত। তারা সকলেই ভগবান শ্রী কৃষ্ণের উপাসক ছিল। রাজা রুদ্র রায় সে কারণে কৃষ্ণনগর নামকরণ করেছিলেন। রাজা রুদ্র রায়ের মৃত্যুর পর রামজীবন রাজা হয়। রাজা রামজীবন এর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র রঘুরাম ও তাঁর পুত্র কৃষ্ণচন্দ্র রাজা (খ্রি:-১৭২৮)হন। তাঁর রাজত্বকালে (১৭২৮-১৭৮২খ্রি:) কৃষ্ণনগরের প্রকৃত উন্নতি ঘটে। তাঁর গৌরবময় চরম শিখরে উন্নতি হয়, যা বাংলার গৌরবের বিষয় হয়ে দাড়ায়। তৎকালীন বঙ্গদেশে যে কয়েকটি বিখ্যাত রাজসভাছিল তা...
☯মেসোপটেমিয়া সম্পাদনায় হিজড়াদের ইতিহাস☯ ▪▪▪▪▪▪▪▪▪▪▪▪▪▪▪ "হিজড়া" শব্দটি একটি উর্দু শব্দ, যা সেমেটিক আরবি ধাতুমূল হিজর থেকে "গোত্র হতে পরিত্যাক্ত" অর্থে এসেছে এবং পরবর্তীতে তা হিন্দি ভাষায় বিদেশী শব্দ হিসেবে প্রবেশ করেছে। শব্দটির ভারতীয় ব্যবহারকে প্রথাগতভাবে ইংরেজিতে "ইউনাক" (Eunuch, অর্থঃ খোজা) বা "হারমাফ্রোডাইট" (hermaphrodite, অর্থঃ উভলিঙ্গ) হিসেবে অনুবাদ করা হয়। মেসোপটেমিয়ার পৌরাণিক কাহিনীতে মানবতার প্রাথমিক লিখিত রেকর্ডগুলির মধ্যে এমন ধরনের রেফারেন্স রয়েছে যা পুরুষও নয় এবং নারীও নয়। দ্বিতীয় সহস্রাব্দের একটি প্রস্তর ট্যাবলেট পাওয়া সুমেরীয় সৃষ্টি কাহিনীতে, দেবী নিনমা এমন ফ্যাশন করেছিলেন যেখানে "কোন পুরুষ অঙ্গ এবং কোন মহিলা অঙ্গ ছিলনা" যার জন্য Enki সমাজে একটি অবস্থান খুঁজে পেয়েছিল: "রাজার আগে দাঁড়ানো"। অ্যাট্রা-হাসিস (খ্রিস্টপূর্ব ১৭০০ খ্রিস্টাব্দ) এর আক্কাডিয়ান পুরাণে, পুরুষ এবং নারীদের পাশাপাশি "জনসাধারণের মধ্যে তৃতীয় শ্রেণি" প্রতিষ্ঠা করার জন্য এনকি, জন্মের দেবী নিন্তুকে উপদেশ দেয়, তাছাড়া ...
আজকের বাংলা চলচ্চিত্র কোন পথে হাঁটছে?                     আমাদের চলচ্চিত্র কি ছিল? কোন দিকে এগোচ্ছে বাংলা চলচ্চিত্র? এক কথায় বলাই যায়, ছিল ত বহু কিছু, তবে এখন দ্রুত প্রসারে মহাপতনের দিকে এগোচ্ছে। তবে এই লক্ষনটি ভালো। বাঙালির পিঠ দেওয়ালে না ঠেকলে বাঙালি ঘুরে দাঁড়ায় না। আমাদের কোনো সংগ্ৰামী-ই রক্ত ছাড়া হয় না। স্বাধীধতা সংগ্ৰাম থেকে দেশভাগ, মুক্তি যুদ্ধ বা ভাষা আন্দোলন সবেতেই রক্তক্ষয় হয়ে এসেছে। তেমনি চলচ্চিত্র শিল্পেও রক্তক্ষরনটা জরুরী।                                          কলকাতা ও ঢাকার বড় বড় বাজেটের ছবি সুন্দর ছবিগুলোও মুখ থুবড়ে পড়ছে। কিছু কিছু স্বার্থলোভী চলচ্চিত্র ব্যাবসায়ী দুটো পয়সার চটজলদি আয়ের জন্য টেলিভিশনের চ্যানেলগুলোকে বিক্রি করে দিচ্ছে। তাছাড়া ইংরেজি ভাষী বাঙালি মায়েরা ছেলেমেয়েদের বাংলা ভাষা না শিখিয়ে, বাংলা আমাদের মাতৃভাষাকে দূরেয়সরিয়ে রাখার জন্য বাংলা সিনেমার অবনতি ঘটছে। ফলে ঢাকা ও কলকাতা দুই শহরেরই সিনেমায় ধ্বস ...