সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

অমৃতস্য কণ্যা

  অমৃতস্য কণ্যাঃ

       "শৃণ্বণ্তত বিশ্বে অমৃতস্য পুত্রাঃ" ঋগবেদের এ মহান সূত্রটির অর্থ বিশ্বের সমুদয় নর-নারী ও জীব অমৃতের সন্তান। সেই মহা তেজময় অমৃৎময় 'ব্রক্ষ্ম', যার সৃষ্টি এই জীবজগৎ। জীবের আবির্ভাব এই ব্রক্ষ্মচক্রে, তিরোধান ও একই চক্রে। ভারতীয় ঋষিদের অপর এক বিস্ময়কর মহান ভাবনার প্রতিফলন ঘটেছিল, তা হল 'বসু
ধৈব কুটুম্বকম। অর্থাৎ এ বিশ্বের সবাই আত্মীয়ে বা কুটুম্ব। প্রাচীন ভারতের এ মহান মানবিক ভাবনার সঙ্গে বিশ্বের করি না। প্রাচীন মহান আর্য সভ্যতার সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও ধর্মের মহৎ ভাব, পৃথিবীর সব প্রান্তের মানুষের সঙ্গে মৈত্রী বন্ধন ও মূল্যবোধের উৎকর্ষ ইত্যাদির কারনে এ পূর্ণভূমি পৌছেছিল খ্যাতির চূড়ায়। তৎকালীন সমাজ ব‍্যবস্থায়  নারী
পুরুষের সহাবস্থান
ছিল অপরিহার্য। ভুমিকাছিল তুল্য মূলল্য।।
আর তাই এ মহান আর্য সভ্যতা গড়ে উঠেছিল নিজস্ব ধারায়, বাঁধাহীন গতিতে।
সুবিশাল সিন্ধু সভ্যতার  পটভূমিকায় সমাজ জীবনর অনেক ক্ষেত্রে নারীর সহযোগ ছিল অনস্বীকার্য। এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত ফরাসী লেখক আঁদ্রে মেরোয়ার জারেজের উক্তি অনুযায়ী --- " The real point is no civilization is possible without the collaboration under the difference between the sexer are accepted ". প্রাচীন সাহিত্য বা শাস্ত্র ঘাঁটলে আমরা দেখতে পাব, সেকালে সমাজ ব্যবস্থায় নারীর সর্বাঙ্গীন অবস্থান বিশেষ মর্যাদার। নারীর শিক্ষাব্যবস্থা, দেহ শুদ্ধির ক্রিয়াকর্ম পদ্ধতি ছিল সুষ্ঠ, নিয়মিত বেদাধ্যয়ণ ছাড়া বেদের অধ্যাপনাও করতেন।     কিছু কিছু মহিলারা এরূপ ব্রক্ষ্মবাদী ছাত্রীরা গুরুর নিকট উপনয়ন গ্ৰহণ করে ছাত্রদের সঙ্গে বেদ  অধ্যায়ন করতেন। যেমন অত্রেয়ী, ঋষি বাল্মিকীর গুরুকূলে লব-কুশেদের সাথে বেদ অধ্যায়ন করতেন।

এ শ্রেণীর ব্রক্ষ্মবাদিনী থেকেই প্রাচীন ভারতে মৈত্রেয়ী, গারগী দের মত বিদূষী মহিলাদের উদ্ভব সম্ভব হয়েছিল। আর্য নারীদের সম্পর্ক আর্য জাতির পিতা মনু বিশেষ উঁচু মর্যাদা পোষন করতেন।তাঁর অনুভবে ছিল- নারী গৃহদীপ্তি, পূজ্য এবং বংশ রক্ষার জন্য মহাভাগ্যবতী। সূত্র ৯/৬ (মণুসংহিতা)। সংসারে সুখ শান্তি,  সমৃদ্ধি বা প্রশান্তির জন্য নারীর                                                                         অবদানই প্রধান । যে কূলে ভগ্নি, পত্নী বা  দুহিতা অত্যাচারী হন,                                                                           সে কূলের বিনাশ অবশ্যম্ভাবী। ( সূত্র- ৩-৫-৭-মণুসংহিতা)।                                                                                উল্লেখিত বিশ্বাসে শ্রদ্ধাশীল হয়ে প্রাচীন হিন্দু ধর্ম মতে নারীদের                                                                            র 'মহিলা' নাম দিয়েছিলেন। মহিলা শব্দের  অর্থ - মহনীয়া                                                                               বা পূজ্য। নারী সম্পর্কে মনুর বিশেষ লক্ষ্য ছিল, নারীদের                                                                                 দেহ-মন-আত্মা যেন বিশুদ্ধ থাকে। কোন ভাবেই যেন।                                           অযাচিত না হয়।                              মানব সংস্কৃতির পরম্পরা শিক্ষা ও ঐতিহ্যের ধারায় দীর্ঘদিনের পরিসরে গড়ে উঠেছে 'মানব সমাজ'। সমাজবদ্ধতার মূল ভিত্তি হল, সুস্থ, সুন্দর, জীবনের ভাবনায় সহাবস্থান, সহমর্মিতা , পারস্পরিক সমব্যথী হওয়ার শক্তি ও স্পৃহা। এ সূত্র পৃথিবীর সব ধর্মের মতের মূলগ্ৰন্থ। আর এসবের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে মানব সমাজের শিক্ষা, সভ্যতা ও সংস্কৃতি। কিন্তু আচার আচরণের, ভাবনায়, কর্মে, সেসব প্রাচীন ঐতিহ্য ও মূল্যবোধের আদর্শ আজ আর কোথায়। সমাজের সর্বত্র উঁচু-নীচু, শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষের চারিত্রিক বিকৃতি ঘটেছে ব্যাপকমাত্রায়। আর এ বিকৃত ভাবনা থেকেই নেমে এসেছে গোটা দেশের সমাজ ব্যাবস্থায় নানা অখ্যাতির খতিয়ান। বিগত কিছুকাল ধরে সমাজে ক্যান্সারের মত ছড়িয়ে পড়েছে নানা লজ্জাজনক, বিবেকমর্জিত ভয়ঙ্কর সব অশুভ কর্মকান্ড ও দুষ্কর্ম। যেমন ব্যাপকহারে নারী নির্যাতন, শ্লীলতাহানি, অত্যাচার, ধর্ষন, খুন, নারীপাচার, অপহরন ইত্যাদী অসংখ্য ঘটনাবলী দেশময় পরিব্যপ্ত হয়েছে। সুন্দর, সুস্থ, মমতাভরা বন্ধন আলগা যেখানে নৈতিক দায়বাধ্যকতা শূন্য।  শুধুমাত্র আইনের অনুশাসনের ফাঁসে মানুষকে আটকে রাখা যায় না। আজ সমাজের  এ সার্বিক অবক্ষয়ের কারন তো অবশ্যই আছে। যেমন পাশ্চাত্যের গতিশীল সভ্যতা জীবনের আনন্দ বাড়িয়েছে। আপাত আনন্দ, স্ফূর্তি, অবাধ ভোগবাদে ধুয়ে মুছে গেছে সবশিক্ষা , নীতির শুদ্ধতা, ঐতিহ্যের পরম্পরাকে রুকবে। কিন্তু এসব অমানবিক কার্যকরনের কুফল শুধুমাত্র ব্যক্তি বিশেষের সঙ্কট নয়, গোটা মানব সমাজের পক্ষে বিপর্যয়কর।
                    উল্লেখিত ভয়াবহ সামাজিক অবক্ষয় ও অবনমণের পেক্ষাপটে আমার প্রতিবেদন সম্পূর্নত মহিলা তথা আপমর নারী জাতির বিরুদ্ধেসংঘটিত লাঞ্ছনা অপমানের প্রেক্ষিতে তীব্র প্রতিবাদ, তৎসহ আশু উত্তরণের পথ খুঁজে ফেরা। আজকাল বিভিন্ন সংবাদপত্র ও সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত অবাধ নারী নির্যাতনের ঘটনাবলী, তৎসহ খুনের ব্যাপারটা এখন মোটামুটি দৈনন্দিন খবর হয়ে দাড়িয়েছে। ভয়ঙ্কর, ভয়াবহ ও নৃশংস যে সব দুষ্কর্মের ধারাবিবরনী। অজস্র এ ধরণের ঘটনাবলী অনেক সময় আলো খুঁজে পায় না, অন্ধকারেই থেকে যায়। আবার যদিও কোনো রকমে ধরা পড়লোতো প্রভাবশালীদের চাপে নানা কূট-কৌশলে ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে। আর শাস্তির ঘটনা কম বলে অপরাধের সংখা ক্রমবর্ধমান। মর্মান্তিক সব ঘটনায় লাঞ্ছিততার, ধর্ষিতার নিদারুন কষ্ট সহ্য করার তৎসহ  চরম সহ্য করারও একটি সীমারেখা তো আছে। সে গন্ডী অতিক্রম করলেঘটে যায় অপর এক মর্মান্তিক, বেদনাদায়ক পরিসমাপ্তি। সমাজের, রাষ্ট্রের সব দায়ের অবসান হয় তখনি। এমন বিয়োগাস্ত পরিসমাপ্তির ঘটনারও কমতি নেই। মধ্যম গ্ৰামের সেই নাবলিকা, বার বার ধর্ষনের কারনে ক্ষোভে, অপমানে গায়ে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যা করে। মালদহের মাণিকচকে সেই গৃহবধূটি ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে থানায় যেতে চেয়েছিলেন। গ্ৰামের সালিশি সভায় তাকে ডাকিয়ে থামানো হয়। বিধান দেওয়া হয় অপরাধীকে কিশোরীর পা ছুঁয়ে ক্ষমা চাইতে হবে আর কুড়িবার কান ধরে উঠবোস করতে হবে। অভিযোগকারিনী সে বিধানে সম্মত না হওয়ায় তাঁকেই 'কুলোটা' আখ্যা দিয়ে সভায় তাঁকে হেনস্থা করা হয়। সে সব অপমান সহ্য করতে না পারায় পরদিন সকালে গায়ে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যা করেন।
                নারীর প্রতি আক্রমণ সংঘবদ্ধ, সাম্প্রতিক কালে ঘটনার প্রবণতা এতই বেড়েছে যে , আমার মনে হয় মেয়েরা যেন ভোগবিলাশের জিনিস। যে যখন পারবে ভোগ করবে। এসব আগেও ছিল, তা অধিকাংস ঘটনা অন্ধকারে থেকে যেত। বর্তমানের ঘটনাগুলি প্রকাশ্য হচ্ছে। যত প্রকাশ্যে আসবে তত প্রচার পাবে, আর ততই প্রতিরোধক শক্তি বারবে। আগের থেকে পরিস্থিতির পরিবর্তন এসেছে অনেক। আগে এধরনের ঘটনাগুলো মেয়েরা সম্নানহানি চোখে দেখত। বর্তমানে অধিকার ভঙ্গ হিসেবে দেখছে। মেয়েটির অভিপ্রায় অণুসারে যে কোনো স্থানে যাওয়ার অধিকার আছে, যে কোনো পোষাক পরারও অধিকার আছে, তার শরীরের ওপর কেবল তারিই অধিকার রয়েছে। এখন ধর্ষনকে আর মেয়েদের লজ্জা বলে মানতে রাজী নন। লজ্জার আছেটা কী? লজ্জা পাবার কথা ধর্ষকের, যিনি একজন মানুষ হয়ে আরেক জন মানুষকে নির্মম অত্যাচার করা। লজ্জা তো পুরুষের পাওয়া উচিৎ।
                 বিষয়বস্তু ঘটনায় পরিবর্তনের উদাহরণ আরোও আছে। দূর্ভাগ্যজনক ঘটনায় ভেঙে না পড়ে অত্যাধিক সাহসি হয়ে নির্যাতিতার আত্মীয়রা দিশা দেখিয়েছেন। প্রথমে আসি পার্ক স্ট্রীটের ঘটনায়। গণধর্ষিতা মেয়েটি টিভির পর্দায় প্রথমে যখন আসে মুখ চাপা দিয়ে, তবে অল্পদিনের পরই মুখের ঢাকা সরিয়ে স্ব নামে , সর্ব-সমক্ষে দাড়িয়ে নিজ পরিচয় দেন যে, আমি ' সুজেট'। অন‍্য ঘটনায় আবার আসা যাক। কাটোয়ার কেতুগ্ৰামের বৃদ্ধা বাসিন্দা তার পুত্রবধূ কে বাচায় তার নিজের ছেলেদের কাছ থেকে এবং তার ছেলেদের কে পুলিশের হাতেও তুলে দিয়েছিলেন। এমণকি আসামে গণধর্ষিতার পক্ষ্য হয়ে হয়ে মূখ্যমন্ত্রীর কাছে হাতে মশাল নিয়ে প্রতিবাদও জানিয়েছিলে। আবার ইম্ফলে কাংলা দূরগে আসাম রাইফেলসের সদর দফতরের সামনেৎবারোজন বিরঙ্গনা মায়েরা সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন,---' Indian Army Rape Us,' এছাড়া হাতের ব্যানারে কবিতার ছন্দে লেখা ছিল, আমরা সবাই মনোরমার মা, আমাদের ধর্ষণ করো, আমাদের হত্যা কর। এ অভিনব ঐতিহাসিক প্রতিবাদের ধরণ শুধুমাত্র ভারত নয়, সারা বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছিল।
     এই বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ বা বিচার বিভাগের তৎপরতায় যে অনেকখানি বেড়েছে তার কিছু ঘটনা উদ্ধৃত করলাম।
(১) দিল্লিতে নির্ভয়া কান্ড:- ১৬ই ডিসেম্বর , ২০১২ সালে ফাঁকা বাসে রাতে নৃশংস ভাবে গণধর্ষণ করা হয় বছর তেইশের এক প্যারা মেডিক্যাল ছাত্রীকে। দু সপ্তাহের মাথায় তাঁর মৃত্যু হয়। উত্তাল হয়ে ওঠে রাজধানী। দ্রুত বিচারে 'ফার্সট ট্রাক কোর্টে ১৬ ই সেপ্টেম্বরে ২০১৩ ফাঁসীর সাজা শুনিয়েছিল।
(২) মুম্বাই শক্তি মিলস গণধর্ষণ:- ৩১ শে জুলাই , ২০১৩ টেলি অপারেটর তরুণীকে  চার জন অপরাধী মিলে।গণধর্ষণ করে। তারপর সাত মাস একুশ দিনের মাথায় বিচারে প্রত্যেকের যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়।
উল্লেখিত নির্ভয়া কান্ডের পর আইনের নতূন ধারাণুযায়ী  একাধিক গণধর্ষক কে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হবে।
                 কিন্তু এর ব্যতিক্রম ঘটনাও তো আছে অসংখ্য। ঘটনাটি ১৯৯৬ সালের ১৬ই জানুয়ারীর। কেরলের সূর্যনেলীর গণধর্ষনের কথায় আসা যাক। মাত্র ১৬ বছরের কণ্যাকে স্কুলে যাওয়ার পথে অপহরণ করে ৪০ দিন আটকে রেখে তাকে অসংখ্যবার গণধর্ষণ করে। এর তালিকায় যারা ছিলেন তারা কেউ ব্যাবসায়ী, কেউ অধ্যাপক, কেউ আইনজীবী। এ ঘটনায় বিচার পেতে সময় লেগেছিল ১৬টা বছর।

               এবার আসা যাক কীভাবে এ ভয়ঙ্কর সামাজিক অপরাধের হাত থেকে উত্তরণের  উপায়। আজ দেশশুদ্ধ মানুষ চাইছেন অপরাধীর শাস্তি হোক। আমার মতে শাস্তিটাই  শিক্ষা নয়। এই ধর্ষককারীদের যথার্থ শিক্ষার প্রয়জন। এই বিষয় টি গভীরভাবে ভাবলে দেখা যাবে--- সমাজের গভীরে বাসা বেঁধে আছে।এর উৎস খুঁজতে গেলে দেখা যাবে সর্বস্তরে গলদ রয়েছে। বর্তমানে পরিবার ছিন্ন-ভিন্ন। একান্নবর্তী পরিবার নিউক্লীয়ার সংসারে পরিণত হয়েছে।। সেখানে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে নানান সংঘাত, বণিবনার অভাব। সংসারে নিঃসঙ্গ সন্তানটি এমন অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে বড় হচ্ছে যে উত্তরণ না পেয়ে একটু একটু করে অপরাধ প্রবণ হয়ে পড়ছে। বর্তমানে সময়ের আশু প্রয়জন, যেটা হল কিভাবে উল্লিখিত ঘটনাগুলি প্রতিরোধ করা যায়। তার উপায় বের করা। একাজ কারোর একার নয় আমার ,তোমোর, আপনার ,সমাজ বিজ্ঞানীদের, অভিভাবকদের , সমাজের প্রতিটি নাগরিক দের। গভীরভাবে ভেবে দেখার সময় এসেছে, কার কী দায়িত্ব, কার কোথায় গাফিলতী। প্রতিবছর নারী দিবস পালন এই সমস্যার সমাধান নয়। এই সময় নিশ্চিতরূপে আত্মদর্শনের সময়। আর দেরী নয়!!!


নাম:- সায়ন দাস (জয়)
ই মেল:- sayandas2159@gmail.com
ওয়েব:- sayan912.blogspot.com














মন্তব্যসমূহ

  1. প্রতিলিপিতে আপনার লেখা পড়লাম। ভালো লাগলো। আপনি অনেক ভালো লিখেন। আমার ব্লগ ঘুরে দেখতে পারেন।
    www.asadjewel.blogspot.com
    আমার লেখা পাঠের আমন্ত্রন রইলো। পড়ুন এবং মতামত জানান।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Krishna Igor sahitya sova

                                                           কৃষ্ণনগরের সাহিত্য সভা বাংলার মুসমানদের যুগের শেষের দিকে কৃষ্ণনগরের যুগ শুরু। এর প্রাচীন নাম ছিল "রেউই"। রাজা রাঘব মাটিয়ারি থেকে রেউই গ্রামে রাজধানী স্থানান্তরিত করেন। রাজা রাঘবের পুত্র রাজা রুদ্র রায়ের (খ্রি:-১৬৮৩-১৬৯৪) সময় থেকে কৃষ্ণনগরের উন্নতির ইতিহাস শুরু। রাজা রুদ্র রায় রেউই নাম পরিবর্তন করে "কৃষ্ণনগর" নাম রাখেন (১৬৮৯ খ্রি:)। রাজা রুদ্র রায়ের সময়ে প্রচুর গোপ বাস করত। তারা সকলেই ভগবান শ্রী কৃষ্ণের উপাসক ছিল। রাজা রুদ্র রায় সে কারণে কৃষ্ণনগর নামকরণ করেছিলেন। রাজা রুদ্র রায়ের মৃত্যুর পর রামজীবন রাজা হয়। রাজা রামজীবন এর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র রঘুরাম ও তাঁর পুত্র কৃষ্ণচন্দ্র রাজা (খ্রি:-১৭২৮)হন। তাঁর রাজত্বকালে (১৭২৮-১৭৮২খ্রি:) কৃষ্ণনগরের প্রকৃত উন্নতি ঘটে। তাঁর গৌরবময় চরম শিখরে উন্নতি হয়, যা বাংলার গৌরবের বিষয় হয়ে দাড়ায়। তৎকালীন বঙ্গদেশে যে কয়েকটি বিখ্যাত রাজসভাছিল তা...
☯মেসোপটেমিয়া সম্পাদনায় হিজড়াদের ইতিহাস☯ ▪▪▪▪▪▪▪▪▪▪▪▪▪▪▪ "হিজড়া" শব্দটি একটি উর্দু শব্দ, যা সেমেটিক আরবি ধাতুমূল হিজর থেকে "গোত্র হতে পরিত্যাক্ত" অর্থে এসেছে এবং পরবর্তীতে তা হিন্দি ভাষায় বিদেশী শব্দ হিসেবে প্রবেশ করেছে। শব্দটির ভারতীয় ব্যবহারকে প্রথাগতভাবে ইংরেজিতে "ইউনাক" (Eunuch, অর্থঃ খোজা) বা "হারমাফ্রোডাইট" (hermaphrodite, অর্থঃ উভলিঙ্গ) হিসেবে অনুবাদ করা হয়। মেসোপটেমিয়ার পৌরাণিক কাহিনীতে মানবতার প্রাথমিক লিখিত রেকর্ডগুলির মধ্যে এমন ধরনের রেফারেন্স রয়েছে যা পুরুষও নয় এবং নারীও নয়। দ্বিতীয় সহস্রাব্দের একটি প্রস্তর ট্যাবলেট পাওয়া সুমেরীয় সৃষ্টি কাহিনীতে, দেবী নিনমা এমন ফ্যাশন করেছিলেন যেখানে "কোন পুরুষ অঙ্গ এবং কোন মহিলা অঙ্গ ছিলনা" যার জন্য Enki সমাজে একটি অবস্থান খুঁজে পেয়েছিল: "রাজার আগে দাঁড়ানো"। অ্যাট্রা-হাসিস (খ্রিস্টপূর্ব ১৭০০ খ্রিস্টাব্দ) এর আক্কাডিয়ান পুরাণে, পুরুষ এবং নারীদের পাশাপাশি "জনসাধারণের মধ্যে তৃতীয় শ্রেণি" প্রতিষ্ঠা করার জন্য এনকি, জন্মের দেবী নিন্তুকে উপদেশ দেয়, তাছাড়া ...

তিগোয়া হিন্দু মন্দির তিগোয়া গ্ৰাম মধ্য প্রদেশের বাহোরিবান্ডের জবলপুরের নিকটে অবস্থিত। যসেখানে বেশ কয়েকটি মন্দির রয়েছে। এই মন্দিরগুলির মধ্যে কেবলমাত্র কঙ্কালী দেবী মন্দির আজ অবধি ভালভাবে সংরক্ষণে রয়েছে। টিগোভা একটি ছোট্ট গ্রাম যা এক সময় ঝাঁঝানগড় নামে দুর্গের একটি শহর ছিল। টিগোভা বা তিগাওয়া শব্দের আক্ষরিক অনুবাদ 'তিনটি গ্রাম'। কঙ্কালী দেবীর মন্দির এবং আরেকটি বিষ্ণু মন্দির তিগাওয়া বা টিগোভা মন্দির হিসাবে পরিচিত। এই জায়গাটি পাহাড়ের কাইমুর রেঞ্জের নিকটে একটি মালভূমিতে অবস্থিত। এই অঞ্চল থেকে খননকার্যের ফলে পাওয়া গেছে নানান মৃৎশিল্প ও ইট। আলেকজান্ডার কানিংহাম ১৮৭৯ সালে অনুমান করেছিলেন যে বাহোরিবান্ড (তিগোয়া প্রায় ৪ কিলোমিটার দক্ষিণে) টলেমি থোলাবানা হিসাবে অনূদিত হয়েছিল এমন শহর হতে পারে। তিগোয়া (টিগোয়া, টিগোয়ান, তিগওয়ান) নামটি "ত্রি-গাওয়া" বা "তিনটি গ্রাম" থেকে উদ্ভূত হতে পারে, যা পাশের গ্রাম আমগোয়া এবং দেওরির উল্লেখ করে। স্থানীয় traditionতিহ্য বিশ্বাস করে যে এটির একবার দুর্গ ছিল এবং এটি প্রাচীন বাহুড়িবাঁধের শহরতলির ঝাঁঝানগড় নামে একটি বড় শহরের অংশ ছিল। এই মন্দিরে একটি গর্ভগৃহ এবং চারটি স্তম্ভ দ্বারা যুক্ত পোর্টিকো রয়েছে। পোর্টিকোটি প্যানেলযুক্ত প্রাচীর ও একটি সমতল ছাদ দিয়ে আবৃত। গর্ভগৃহের ভিতরে অবতার নরসিংহর একটি চিত্র রয়েছে। এই পোর্টিকোতে বিষ্ণু বা নারায়ণ এবং চামুণ্ডা বা কাঙ্কালী দেবীর চিত্র চিত্রিত রয়েছে। এছাড়া মন্দিরের উপরে একটি সর্পযুক্ত বৌদ্ধ তীর্থঙ্করের (সম্ভবত বুদ্ধ হবে না) একটি বৃহৎ প্রতিমা রয়েছে। তবে আমার ধারনানুযায়ী এটা কোনো তীর্থঙ্করের স্থাপত্য নয়, এটি সর্পযুক্ত বিষ্ণুর স্থাপত্য। টিগোভার স্মৃতিসৌধটিতে প্রায় ৩টি মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। তবে বর্তমানে কেবল কঙ্কালী দেবীর মন্দিরটিই দাঁড়িয়ে আছে। মন্দিরটি গুপ্ত আমলে ৫ম - ৬ষ্ঠ শতাব্দীর সময়কালে তৈরী। কানিংহাম অনুমান করেছিলেন যে মন্দিরটি প্রায় ১৯.৫ ফুট বর্গ ছিল। মন্দিরের গর্ভগৃহটি বাইরের দিকের উচ্চতা প্রায় ১২ ফুট এবং ভিতরে প্রায় ৮ ফুট বর্গ। পূর্বেই বলেছি এটি একটি সমতল ছাদ দ্বারা গঠিত। গর্ভগৃহের দরজাটি টি-আকারের কৌশল রয়েছে। মন্দিরের দরজার জামগুলি প্রবেশদ্বারটির চারপাশে এককভাবে উল্লম্ব ব্যান্ডগুলিতে খোদাই করা হয়েছে। প্রবেশদ্বারের প্রাচীরের বাম দিকে নদীর দেবী গঙ্গা একটি জলযান ধরে এবং তার কুমিরবাহানকে চড়ছেন, এবং উপরের ডানদিকে নদীর দেবী যমুনাও তাঁর কচ্ছপবাহন বেয়ে চড়ে একটি জলযান ধরে আছেন। দেবী গঙ্গা কাস্টার্ড-আপেল গাছ থেকে ফল সংগ্রহ করছেন, অন্যদিকে যমুনা একটি আমের গাছ থেকে একটি সংগ্রহ করছেন। মন্দিরের গর্ভগৃহের অভ্যন্তরে নরসিংহের একটি চিত্র রয়েছে। এছাড়া মন্দিরের মণ্ডপের পাশের দেয়ালগুলিতে বিভিন্ন ভাস্কর্যীয় প্যানেল দেখা যায়। একটি প্যানেলে চামুণ্ডা বা কঙ্কালী দেবীর চিত্র রয়েছে। আর তাই মন্দিরটি কঙ্কালি দেবীর মন্দির নামে খ্যাত। এছাড়া বিশ্রামরত ভগবান বিষ্ণুর একটি চিত্র দেখা যাবে। এখানে একটি ভাস্কর্যের প্যানেল রয়েছে যা দীর্ঘায়িত কান এবং মাথার উপরে একটি বৃহৎ মুকুটযুক্ত মানব বসা অবস্থা রয়েছে। এমন স্থাপত্য বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের ভাস্কর্যগুলিতে সাধারণত দেখা যায়। মন্দিরের অবশিষ্ট অংশগুলি পরবর্তী সময়ে নির্মিত হয়েছিল বলে মনে হয়। গর্ভগৃহটিতে দেবী দুর্গার একটি মুর্তি রয়েছে এবং সামনে বাইরের দেওয়ালটিতে ভগবান বিষ্ণু তাঁর সমস্ত অবতারের সাথে খোদাই করেছেন, যাঁরা দেবী সূর্য, দেবী চামুন্ডি এবং গণেশকে বাদ দিয়ে মূল চিত্রের চারপাশে চিত্রিত করেছেন। এই মন্দিরটির সামনে একটি বারান্দা রয়েছে যার চারটি স্তম্ভ রয়েছে। তথ্যসূত্র (১) ভারতের সাংস্কৃতিক ইতিহাস; প্রকাশ, 2005(URL) (২) হিন্দু স্থাপত্যের এনসাইক্লোপিডিয়া; প্রসন্ন কুমার আচার্য, ২০১০, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস (URL) (৩) ভারতীয় মন্দির আর্কিটেকচার; অ্যাডাম হার্ডি, 1995,অভিনব প্রকাশনা( URL) (৪) Gupta Art; Agrawala, V S 1977; Prithivi Prakashan. New Delhi. ((URL) (৫) Corpus Inscriptionum Indicarum Vol III; Bhandarkar, D R; 1981; Archaeological Survey of India; New Delhi (URL) (৬) ছবি..URL