সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান
পণপ্রথা যা সামাজিক ব্যাধি "

                                              "যাব না বাসরকক্ষে বধূবেশে বাজায়ে কিঙ্কিণী —
                                                      আমারে প্রেমের বীর্যে করো অশঙ্কিনী।
                                                             বীরহস্তে বরমাল্য লব একদিন"
                                                                                                                  -- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর













বধূজীবনের প্রতি কেন নারীর এই অনাসক্তি? কেন তার হৃদয়মথিত এই অভিমান? যে নারী গৃহের সৌন্দর্য ও শান্তির চির উৎস, কেন সেই নারীর জীবনে নেমে আসে অকাল মৃত্যুর অভিশাপ? কেন নারী পরিণত হয় বিবিকিনির সহজপণ্যে? পণপ্রথাই হল হৃদয়হীন সমাজের সেই নির্লজ্জ নারী নিপীড়নের অন্যতম হাতিয়ার। এই নির্মম প্রথার পাষান ফলকে লেখা আছে কত নারীর করুন কাহিনি। অন্ধসমাজ  অনুশাসনের গায়ে আজও শোনা যায় অশ্রুময়ী নারীর দীর্ঘশ্বাস। শোনা যায় কত বুক চাপা করুন কান্না। সেখানে আজও জ্বলছে নিরুপমার চিতা। সেই চিতায় আজও পুরছে কত নারী। কত নারীর স্বপ্ন বিলীন হচ্ছে। 
                   যৌতুক বা পণ হল কন্যার বিবাহে পিতামাতার সম্পত্তির হস্তান্তর প্রক্রিয়া। ‘যু’ ধাতু থেকে নিষ্পন্ন ‘যুত’ শব্দের অর্থ যুক্ত; বুৎপত্তিগত অর্থ হলো, পাত্র-পাত্রীর যুক্ত হওয়ার সময়ে অর্থাৎ বিয়ের সময় পাত্রীর জন্য যা কিছু মূল্যবান সামগ্রী দেয়া হয়, তা যৌতুক।

                অথচ প্রাচীন ভারতে একদিন সমাজে নারীর স্থান ছিল কত মর্যাদার।বেদবিদ্যায়, শাস্ত্রালোচনায়, যুদ্ধবিদ্যায় ছিল তার সমাধিকার। যোগ্য পাত্র নির্বাচনেও ছিল সমান অধিকার। প্রেমই ছিল জীবনের মৌলভিত্তি। সেদিনও বিবাহের যৌতুক দেওয়ার রীতি ছিল কিন্তু তা যাতনার বিষয় হয়নি। বিবাহ সেদিন ছিল না পণ্যের পণ। 
                   তারপর নারীর সেই গৌরবের দিন একদিন শেষও হল। গার্গী, লোপামুদ্রা, অপালা, লোপামুদ্রাদের যুগ গেল হারিয়ে। এল মধ্যযুগ, মুসলমান শাসন  নারী হারাল শিক্ষা, স্বাধীনতা। বিবাহের যৌতুক ধীরে ধীরে পরিণত হল সমাজিক ব্যাধিতে। শুরু হল পণপ্রথার পীড়ন। বিবাহ নরনারীর এক চিরন্তন মঙ্গল অনুষ্ঠান। সেই অনুষ্ঠানে এল নির্মম নিয়ম। এল কৌলীন্য প্রথার অভিশাপ। কুলীন পাত্রের হাতে কন্যাদান করে কন্যাদায়গ্ৰস্ত পিতা হলেন সর্বশান্ত। ঘরে ঘরে অকাল বৈধব্যের হাহাকার। অবশ্য এই সমস্ত নিয়ম শুরু হল মুসলমান সম্প্রদায়ের আগমনের পর। তারা হিন্দু সমাজের নারীদের অত্যাচারের কারনে হিন্দুসমাজ নারীকূলকে রক্ষার তাগিদে এই আইন মানতে বাধ্য হলেন। (আমি কোনো সম্প্রদায়কে হেতু করিনি, শুধুমাত্র ইতিহাসটা তুলে ধরেছি।) কিন্তু আজকের সমাজে এখনও এই নীতি মেয়ের পিতামাতারা মেনে চলেছেন। পাত্রী রুপবতী, গৃহনিপুন, সুশিক্ষিতা হওয়া সত্ত্বেও পাত্রপক্ষ চাইছে আর পাত্রী পক্ষ দিচ্ছে। 









                            


                 আর এর ফলে পাত্রপক্ষ পাত্রীপক্ষের মাথায় চড়ে বসছে। ইদানীং একটা কথা প্রায়ই শোনা যায়, 'প্রগতি' কথাটির আসল অর্থ না জেনে পাত্রীপক্ষ সনানন্দে কথাটি স্বীকার করছে। ঐতিহাসিক বিদায় হজ্জের ভাষণে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছিলেন, ‘ভ্রাতৃগণ, শ্রবণ কর। নারীদের অধিকারের ব্যাপারে সতর্ক থাক। নারীদের প্রতি তোমরা সদ্ব্যবহার করবে। তোমাদের স্ত্রীদের প্রতি তোমরা অন্যায় আচরণ করবে না।’কিন্তু আমাদের সমাজব্যবস্থায় নারীর প্রতি সহিংসতা দিন দিন বেড়েই চলছে। এর নানাবিধ কারণের মধ্যে অন্যতম একটি যৌতুক। এই যৌতুক প্রথা একটি জঘন্য সামাজিক ব্যধি। ছোঁয়াচে রোগের মতো এই যৌতুক প্রথা বিভিন্ন জাতি ও সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে প্রবেশ করেছে।  যৌতুক হলো- বিবাহ উপলক্ষে বরকে উপহারাদি দান করা। অর্থনৈতিক অসমতা যৌতুক প্রথার একটি অন্যতম কারণ। কন্যা দায়গ্রস্ত পিতা হয়তো মেয়ের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের কথা চিন্তা করে তার যথা সর্বস্ব দান করে পাত্রপক্ষকে সন্তুষ্ট করতে চান। কিন্তু কোনো কারণে প্রতিশ্রুতি মতো পণের সামগ্রী দিতে ব্যর্থ হলে মেয়েটির ওপর নেমে আসে অমানুষিক অত্যাচার আর নির্যাতন। অনেক ক্ষেত্রে মেয়েটিকে হত্যা করতেও তারা দ্বিধাবোধ করে না। আমরা এমন এক সমাজে বাস করছি এখানে নির্যাতিতা এবং তার পরিবার সঠিক বিচারটুকু থেকেও বঞ্চিত হয়। যৌতুক প্রথা আমাদের সমাজকে পদে পদে কলুষিত করছে। এর কারণে কতো বালিকা বধূর হাতের মেহেন্দির রং যে অকালেই মুছে গেছে তার ইয়ত্তা নেই। তাছাড়া যৌতুক পারিবারিক জীবনে স্বামী-স্ত্রীর শ্রদ্ধাপূর্ণ সম্পর্ককে বিনষ্ট করে।
                       ভারতে পণপ্রথার কারণে নববধূর মৃত্যুহার বিশ্বে সর্বাধিক৷ ২০১৫ সালে ৭৬ হাজারেরও বেশি নববধূকে পুড়িয়ে মারা হয় কিংবা নির্যাতনের মুখে আত্মহত্যায় বাধ্য করা হয়৷ অভিযুক্তদের মাত্র ৩৫ শতাংশের সাজা হয়েছে৷ এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বরপক্ষের দাবিমতো পণ না দিতে না পারার কারণে গোটা ভারতে প্রতিদিন গড়ে প্রাণ হারাতে হয় ২০ জন নববধূকে৷ রাজধানী দিল্লিতেই গত কয়েক বছরে পণপ্রথার কারণে প্রাণ হারান ৭১৫ জন নববধূ৷ এই সংখ্যা ক্রমশই উর্ধ্বমুখী৷ এ বছরের অক্টোবর মাস পর্যন্ত পণ সংক্রান্ত কারণে ১০৫ জন নববধূর প্রাণ হারান৷ এই কুপ্রথা এক সামাজিক সংক্রমণের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ এখানে ধনী-দরিদ্র নেই, শিক্ষিত-অশিক্ষিত বা শহর-গ্রামের প্রশ্ন নেই৷ মানুষের অর্থলোলুপতাই একমাত্র কারণ বলে মনে করেন সমাজবিদরা৷ শুধু তাই নয়, পরিবারের সামাজিক অবস্থানের ভিত্তিতে গয়না, নগদ অর্থ কিংবা বিলাসবহুল গাড়ি থেকে জমি, গরু, মহিষ কিছুই বাদ যায় না৷ না দিলে সমাজে বরপক্ষের মান থাকে না– এই ধরনের মানসিকতা এর পেছনে কাজ করে৷ কয়েকদিন আগে দিল্লির ঘটনা৷ উচ্চ-শিক্ষিতা ২৮ বছরের এক নারী৷ দিল্লির আইআইটি থেকে সিভিল ইঞ্জিনীয়ারিংয়ে পিএইচডি-র ছাত্রী মঞ্জুলা দেবক ইনস্টিটিউটের হস্টেলে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করলেন৷ আত্মহত্যার আগে মঞ্জুলা তাঁর এক বান্ধবীকে হোয়াটস-অ্যাপে সবকিছু জানিয়েছিলেন৷ বলেছিলেন, তাঁর স্বামী নতুন ব্যবসা শুরু করার কারণ দেখিয়ে তাঁর বাপের বাডি থেকে ২৫ লাখ টাকা আনার জন্য চাপ দেয়৷ টাকা না পেলে ডিভোর্স করার হুমকি দেয়৷ মেয়ের আত্মহত্যার পর মঞ্জুলার বাবা মাথা চাপড়ে আর্তনাদ করেন, মেয়েকে উচ্চশিক্ষার জন্য টাকা খরচ না করে ঐ টাকা বিয়ের যৌতুকের জন্য রাখলে হয়ত মেয়ের প্রাণটা বাঁচতো! পুলিশ মঞ্জুলার স্বামী রীতেশকে ভোপাল থেকে গ্রেপ্তার করেছে৷ দিল্লির লাগোয়া উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদে পণের দাবিতে বৌয়ের গায়ে অ্যাসিড ঢেলে পুড়িয়ে মারে তাঁর স্বামী৷ পুলিশ তাঁর স্বামীকে অবশ্য গ্রেপ্তার করেছে৷ এই ধরনের পাশবিক ঘটনার অন্ত নেই৷ স্কুল শিক্ষিকা সংগীতা ভার্মাকে শ্বশুর বাড়ির লোকেরা জীবন্ত পুড়িয়ে মারে গত এপ্রিলে৷ 
          এমন অসংখ্য ঘটনা৷ তার মধ্যে পুলিশ ৯৪ শতাংশের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিলেও দোষী সাব্যস্ত হয় ৩৫ শতাংশেরও কম৷ অবশিষ্ট মামলা বিভিন্ন আদালতে ঝুলে থাকে বছরের পর বছর৷ পুলিশের চার্জশিটে বধূ হত্যা কিংবা স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির অন্য লোকেরা দিনের পর দিন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়ে নববধূকে আত্মহত্যার পথে ঠেলে দেবার উল্লেখ করা হয়৷ পুলিশ বিভাগের প্রাপ্ত তথ্য বলছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হত্যা করা হয় জীবন্ত পুড়িয়ে৷ বধূর গায়ে কেরোসিন বা পেট্রোল কিংবা অ্যাসিড জাতীয় দাহ্য তরল ঢেলে৷ কারণ, পুড়িয়ে মারলে খুনের ঘটনা প্রমাণ করা শক্ত৷ জাতীয় অপরাধ ব্যুরোর রেকর্ড অনুসারে, গত তিন বছরে পণপ্রথার কারণে প্রাণ হারাতে হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার নববিবাহিত বধূকে৷ সবথেকে বেশি হয়েছে ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যে– ৭০৪৮ জন৷ তারপর বিহার ও মধ্যপ্রদেশে, যথাক্রমে ৩৮২০ এবং ২২৫০ জন৷ স্বামী বা শ্বশুর বাড়ির লোকেদের হাতে দৈহিক ও মানসিক পীড়নের অভিযোগের সংখ্যা সাড়ে তিন লাখের মতো৷ সবথেকে বেশি পশ্চিমবঙ্গে– ৬১ হাজারেও বেশি৷ তারপর রাজস্থানে৷ সংসদে এই তথ্য জানান মহিলা ও শিশু বিকাশ মন্ত্রী মানেকা গান্ধী৷

                    এমনকি শুধু হিন্দু সমাজি নয় মুসলমান সমাজ দেশগুলিতেও পণপ্রথা নির্মম ভাবে বেড়ে চলেছে। 
নিম্নে কিছু ঘটনা উল্লেখ করলাম।
                     (ক) যৌতুকের কারণে বাংলাদেশে মৃত্যুর ঘটনা আগের থেকে বেড়ে গেছে৷ গত ৮ই মার্চ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’৷ সিরাজগঞ্জের বেলি খাতুন৷ সম্পন্ন ঘরেই মেয়েটির বিয়ে হয়েছিলো৷ কিন্তু বিয়ের তিন বছর যেতে না যেতেই আগুনে পুড়ে মৃত্যু হলো তার৷ বেলির বড় ভাইয়ের অভিযোগ, ‘‘কোনো দুর্ঘটনা নয়, আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে তাঁকে৷ বেলির ভাই মেরাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে বেলির স্বামীকে দেয়া হয় সত্তর হাজার টাকা এবং এক ভরি সোনার গহনা৷ বিয়ের কিছুদিন পর আরো চল্লিশ হাজার টাকার জন্য বেলিকে চাপ দেয় তার স্বামী৷'' সেই টাকা আনতে দেরি হওয়ায় বেলিকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয় এবং পরে দাম্পত্য কলহের কোনো এক পর্যায়ে তাকে পুড়িয়ে মারা হয় বলে জানান মেরাজুল৷
                  (খ) নিউজ বাংলা- ১০ ই এপ্রিল ২০১৯ তারিখে ঘটনাটি ঘটেছে বিহারের গোপালগঞ্জ এলাকায় ৷ পুলিশ সূত্রে খবর, বিয়ের সময় পণ হিসাবে ২ লক্ষ টাকা নগদ ও একটি বাইক চেয়েছিলেন ওই মহিলার স্বামী ৷ কিন্তু পণের টাকা মেটাতে পারেননি মেয়েটির পরিবার ৷ তাই বিয়ের পর থেকে প্রায়ই এ নিয়ে অশান্তি চলত বাড়িতে ৷ সেদিনও পণের বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ার জন্য স্ত্রীকে মারধর শুরু করেন স্বামী ৷ ছেড়ে দেননি শ্বশুরবাড়ির লোকেরাও ৷ এরপরেই গৃহবধূর চুল ছিঁড়ে, নখ উপড়ে, গায়ে ছ্যাঁকা দিয়ে পুড়িয়ে তাঁকে ফেলে দিয়ে যাওয়া হয় রেললাইনের উপর ৷ যাতে রেলে কাটা পড়ে তাঁর মৃত্যু হয় ৷ তবে ট্রেন আসার আগেই ওই অবস্থায় একজন মহিলাকে রেললাইনে পড়ে থাকতে দেখে ছুটে আসেন স্থানীয়রা ৷ তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় হাসপাতালে ৷ চিকিৎসকরা জানান, ওই মহিলার অবস্থা আশঙ্কাজনক ৷ দেহে একাধিক জায়গায় গভীর ক্ষত তৈরি হয়েছে ৷ ৭ জায়গা মারাত্মকভাবে পুড়ে গিয়েছে ৷ 










          
                   (গ) আনন্দ বাজার পত্রিকা, ৩০ শে মার্চ ২০১৯ তারিখে পণ দিতে না পারায় এক গৃহবধূকে ঠিকমতো খেতে না দিয়ে মেরে ফেলার অভিযোগ উঠল স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে। মৃত্যুর সময় তাঁর ওজন ছিল মাত্র ২০ কিলোগ্রাম। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত ওই গৃহবধূর নাম তুষার। তিনি কেরলের করুণাগাপল্লির বাসিন্দা। অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই পণের জন্য তুষারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন তাঁর স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ি। মানসিক ও ঐশারীরিক নির্যাতন তো বটেই, তুষারের খাওয়াদাওয়াও প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিলেন শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। তবে মাঝে মধ্যে পান্তা ভাত আর চিনিগোলা জল খেতে দেওয়া হত তুষারকে। গত পাঁচ বছর ধরে এটাই ছিল শ্বশুরবাড়ির বেঁধে দেওয়া ওই গৃহবধূর খাদ্যতালিকা। প্রয়োজন মতো এবং প্রতি দিন খাবার না পাওয়ায় ধীরে ধীরে শরীর ভেঙে পড়েছিল তাঁর। গত ২১ মার্চ রাতে প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়েন তুষার। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করান শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে মেয়েকে ‘খুন’ করার অভিযোগ আনেন  তুষারের পরিবার। তাঁদের অভিযোগ, বিয়ের সময় সোনার গয়না, টাকা দিয়েছিলেন চাঁদুকে। কিন্তু আরও টাকা দেওয়ার জন্য তুষারের উপর চাপ সৃষ্টি করছিল শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। তুষারের মা বিজয়লক্ষ্মী বলেন, “গত এক বছর মেয়েকে তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। মেয়ের বিপদ আর যাতে না বাড়ে সেই ভয়ে পুলিশেও অভিযোগ জানাইনি।
   (ঘ) বর্তমান পত্রিকা ৩ই ফেব্রুয়ারী ২০১৯ হাওড়া: দাবিমতো পণের টাকা দিতে না পারায় এক গৃহবধূকে মুখে বালিশ চাপা দিয়ে খুন করে ঝুলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। শুক্রবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে জগৎবল্লভপুর থানার মীরপাড়ায়। মৃত গৃহবধূর নাম আসমিনা বেগম (২১)। পুলিস জানিয়েছে, ওই রাতে বাড়িতে অশান্তি হয়। তারপরই বধূকে খুন করা হয়। এরপর বাপের বাড়ির লোকজনকে খবর না দিয়েই শ্বশুরবাড়ির লোকজন মৃতদেহ কবর দিতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু প্রতিবেশীরা বাধা দেয়। এরপর গৃহবধূর বাপের বাড়িতে খবর দেওয়া হয়। শনিবার সকালে বাপের বাড়ির লোকজন সেখানে পৌঁছান। ততক্ষণে শ্বশুরবাড়ির লোকজনেরা পালিয়েছে। এইভাবে আর কত নারী মরবে। এখনও যদি নিজেরা নারীরা সোচ্চার না হয়, তাহলে এখনও বহুবছর এইভাবেই জীবন কাটবে।
মহিলাদের করণীয়- বিবাহযোগ্য‌ মহিলারা পণপ্রথা ও বাল্য‌বিবাহের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেন। পণপ্রথা রোধ করার বিরুদ্ধে তাঁরা রাস্তায় নামতে পারেন, আবার ব্য‌ক্তিগত ক্ষেত্রে পণ না দেওয়ার জন্য‌ অভিভাবকদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারেন। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য‌ আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষ (স্টেট লিগ্যাল সার্ভিসেস অথরিটি ওয়েস্ট বেঙ্গল) বিভিন্ন প্রত্য‌ন্ত গ্রামে শহরে বিভিন্ন সময়ে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান করে থাকে। সেই সব আইনি সচেতনতা শিবিরে দেখা গিয়েছে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী থেকে আইন নিয়ে পাশ করা স্নাতক মহিলারা পর্যন্ত অভূতপূর্ব সাড়া দিচ্ছেন। বিয়ের দিনেও অনেক পাত্রী পাত্রপক্ষ পণ নিচ্ছে জেনে বিয়ে আটকে দিচ্ছে। প্রতিবাদ করাটাই বড় কাজ।
অভিযোগ কোথায় জানাবেন- পাত্রপক্ষ পণ দাবি করলে, যাঁর কাছে দাবি করেছে, তিনি নিজে বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সহায়তায় থানায় এফআইআর করতে পারেন। আর পুলিশ অভিযোগ না নিলে ওই এলাকার মেট্রোপলিটান ম্য‌াজিস্ট্রেট বা ওই এলাকার প্রথম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্য‌াজিস্ট্রেটের কাছে অভিযোগ জানানো যায়। রাজ্য‌ সরকারও এই আইন প্রয়োগের জন্য‌ বিশেষ অফিসার নিয়োগ করতে পারে। জেলা সমাজকল্য‌াণ আধিকারিকের কাছেও অভিযোগ জানানো যায়। মেট্রোপলিটান ম্য‌াজিস্ট্রেট বা প্রথম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্য‌াজিস্ট্রেট নিজে উদ্য‌োগ নিয়ে অথবা পুলিশি রিপোর্টের ভিত্তিতে অভিযোগের বিচার করতে পারেন। এ ছাড়াও যাঁর কাছে বা যাঁদের কাছে পণ চাওয়া হয়েছে তিনি বা তাঁরা যে কোনও স্বীকৃত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাছে নালিশ জানাতে পারেন। এই অভিযোগ জানানোর কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। 
                এই প্রথার জেরেই মহিলারা স্বামীর গৃহে নির্যাতিতা হন। পণপ্রথা নিষিদ্ধ করতে ১৯৬১ সালে তৈরি হয় পণপ্রথা নিষিদ্ধকরণ আইন। এই আইনে ফাঁকফোকর থাকায় সমাজের বিশেষ উপকার হয়নি। বরং সময়ের সঙ্গে পণের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আর এর সঙ্গে বেড়েছে বধূ নির্যাতন, আত্মহত্য‌া, খুনের মতো ঘটনা। উপযুক্ত বয়সে বিয়ের খরচ জোগাড় করা অসম্ভব, এই ভেবেই অনেক সময় বাবা-মায়েরা বাল্য‌ অবস্থাতেই মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেন। অনেকের ধারণা এই সময় পণের পরিমাণ হয়তো কম লাগে। কিন্তু বাল্য‌বিবাহ অন্য‌ায়। সমস্ত বিষয় বিচারবিবেচনা করে বিভিন্ন দফায় এই আইন সংশোধন করে ১৯৮৬ সালে ‘পণপ্রথা নিষিদ্ধকরণ আইন’ শেষ পর্যন্ত আকার নেয়।
পণপ্রথা নিষিদ্ধ করতে হলে সেই সঙ্গে দরকার বাল্য‌বিবাহ রোধ করা। আন্তজার্তিক আইন অনুযায়ী ‘চাইল্ড’ কথাটির অর্থ শূন্য‌ থেকে ১৮ বছর অনূর্ধ্ব এক জন মানুষ। প্রতিটি শিশুরই জীবনধারণের অধিকার, নিরাপত্তার অধিকার, সামগ্রিক বিকাশের অধিকার, জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণের পাশাপাশি বিয়ে করার অধিকার আছে। আমাদের দেশের আইনে বলা আছে, ছেলেদের ২১ বছরে এবং মেয়েদের ১৮ বছরের কম বয়সে বিয়ে দেওয়া যাবে। 










পণ দেওয়া নেওয়ার শাস্তি
পণ দেওয়া বা নেওয়ার সঙ্গে যুক্ত উভয় পক্ষেরই শাস্তির বিধান আছে। এই কাজে সরাসরি যুক্ত থাকা বা লেনদেনে সাহায্য‌ করার জন্য‌ কমপক্ষে ৫ বছর জেল এবং জরিমানা আবার কমপক্ষে ১৫ হাজার টাকা অথবা পণের মূল্য‌, দুইয়ের মধ্য‌ে যেটি বেশি, সেই সাজা হবে।
কিন্তু কোনও রকম জোরজবরদস্তি ছাড়া যদি বর/কনেকে উপহার দেওয়া হয় তবে তা হলে কোনও অপরাধের ঘটনা ঘটে না। তবে সব উপহারের লিখিত তালিকা অবশ্য‌ই রাখতে হবে। প্রচলিত রীতি বা আর্থিক সামর্থ্য‌ অনুযায়ী উপহার দিলে বা নিলে কোনও শাস্তির বিধান নেই।
দাবি করার শাস্তি
সোজাসুজি বা ঘুরপথে পণের দাবি করলে সাজা অন্তত ৬ মাস থেকে দু’ বছরের জেল এবং ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। গণমাধ্য‌মে যদি ছেলে/মেয়ে বা অন্য‌ কোনও আত্মীয়ের বিবাহের জন্য‌ পণ চেয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় তা হলে ছাপাখানা, প্রচারক, প্রকাশকের সাজা হবে ৬ মাস থেকে ৫ বছর পর্যন্ত জেল অথবা ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা। তবে শাস্তির চেয়েও বেশি কার্যকর হল সচেতনতা বৃদ্ধির কথা। ইতিমধ্য‌েই বেশ কয়েকটি সামাজিক ও গোষ্ঠী সংগঠন পণপ্রথার বিরুদ্ধে সচেতনতার কার্যক্রম চালাচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গ আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষ
জেলা ও টেলিফোন নম্বর নিম্নে উল্লিখিত করলাম।
বাঁকুড়া
০৩২৪২-২৫০৩১৫
বীরভূম
০৩৪৬২-২৫৫২৭১
বর্ধমান
০৩৪২-২৬৬২২০২
কোচবিহার
০৩৫৮২-২২৭৬৮১
দক্ষিণ দিনাজপুর
০৩৫২২-২৫৫২০৭
দার্জিলিং
০৩৫৪-২২৫৪২২৯৭
হুগলি
০৩৩-২৬৮০-২১৯১
হাওড়া
০৩৩-২৬৪০-২১৯৩
জলপাইগুড়ি
০৩৫৬১-২২১৬৬৭
কলকাতা
০৩৩-২২৩০-৪৬২৩
মালদা
০৩৫১২-২৫২৩০১
মুর্শিদাবাদ
০৩৪৮২-২৫৬৬৫০
পশ্চিম মেদিনীপুর
০৩২২২-২৭৫৮১৫
পূর্ব মেদিনীপুর
০৩২২৮-২৬৯৩৮৯
পুরুলিয়া
০৩২৫২-২২৬৬০৩
নদিয়া
০৩৪৭২-২৫২৩৩৮
উত্তর ২৪ পরগনা
০৩৩-২৫৫২-৩০৯০
দক্ষিণ ২৪ পরগনা
০৩৩-২৪৭৯-৭৬৯১
উত্তর দিনাজপুর
০৩৫২৩-২৫২৩০৪

                     নারী আজ তার আপন ভাগ্য জয় করার অধিকার পেয়েছে। জীবন বিকাশের বিচিত্র ধারায় আজ তার প্রতিভার নানা স্বাক্ষর আজ পর্বতশীর্ষে সে রেখে আসে দুঃসাহসিকতার পরিচয়। আকাশপথে সে পাড়ি দেয়। মরু অভিযানে সে হয় পুরুষের সহযাত্রিনী। জ্ঞান-বিজ্ঞান-শিল্প-সাহিত্যে তার বিজয়িনীর দৃপ্ত মহিমা। সেখানে পণপ্রথা নারীর লজ্জা, পুরুষের অগৌরব। আজ সময় এসেছে এর অচলায়তন ভাঙার। আইন করে মানুষের মন বদলানো যায় না। এর একমাত্র প্রতিকার জনমত, জনরোষ ও গণধিক্কার। আমাদের এগুলি সংগঠিত করতে হবে। মানুষের মানসিক প্রসারই জরুরি। যতদিন সেটা না আসবে ততদিন বিবাহার্থী পুরুষের মনের কথাটা অন্নদাশঙ্কর রায়ের ছড়ার পথ ধরেই উচ্চারিত হবে,
                        "করেছি পণ, নেব না পণ
                           বৌ যদি হয় সুন্দরী
                       কিন্তু আমায় বলতে হবে
                           স্বর্ণ দেবে কয় ভরি।"


তথ্যসূত্র:- (১) বিবাহ ও পণপ্রথা- বিবাহে পণ নেওয়া একটি অপরাধ।
                (২) পণপ্রথা এক মহামারি- তনুষ অধিকারীর প্রবন্ধ
                (৩) আনন্দ বাজার পত্রিকা, বর্তমান, আজকাল ও বিভিন্ন পত্র পত্রিকা।
                (৪) বিকাশপিডিয়া
                 
প্রধান সহযোগীতা:-:- পূজা মন্ডল 
মর্ডান ইতিহাস, এম.এ., কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, 
সহযোগীতা:- প্রলয় রুদ্র মুখোপাধ্যায় ও তনুশ্রী নস্কর





প্রতিবেদক:- সায়ন দাস
ইতিহাস এম.এ., স্টেট ইউনিভার্সিটি


                                              

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Krishna Igor sahitya sova

                                                           কৃষ্ণনগরের সাহিত্য সভা বাংলার মুসমানদের যুগের শেষের দিকে কৃষ্ণনগরের যুগ শুরু। এর প্রাচীন নাম ছিল "রেউই"। রাজা রাঘব মাটিয়ারি থেকে রেউই গ্রামে রাজধানী স্থানান্তরিত করেন। রাজা রাঘবের পুত্র রাজা রুদ্র রায়ের (খ্রি:-১৬৮৩-১৬৯৪) সময় থেকে কৃষ্ণনগরের উন্নতির ইতিহাস শুরু। রাজা রুদ্র রায় রেউই নাম পরিবর্তন করে "কৃষ্ণনগর" নাম রাখেন (১৬৮৯ খ্রি:)। রাজা রুদ্র রায়ের সময়ে প্রচুর গোপ বাস করত। তারা সকলেই ভগবান শ্রী কৃষ্ণের উপাসক ছিল। রাজা রুদ্র রায় সে কারণে কৃষ্ণনগর নামকরণ করেছিলেন। রাজা রুদ্র রায়ের মৃত্যুর পর রামজীবন রাজা হয়। রাজা রামজীবন এর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র রঘুরাম ও তাঁর পুত্র কৃষ্ণচন্দ্র রাজা (খ্রি:-১৭২৮)হন। তাঁর রাজত্বকালে (১৭২৮-১৭৮২খ্রি:) কৃষ্ণনগরের প্রকৃত উন্নতি ঘটে। তাঁর গৌরবময় চরম শিখরে উন্নতি হয়, যা বাংলার গৌরবের বিষয় হয়ে দাড়ায়। তৎকালীন বঙ্গদেশে যে কয়েকটি বিখ্যাত রাজসভাছিল তা...
☯মেসোপটেমিয়া সম্পাদনায় হিজড়াদের ইতিহাস☯ ▪▪▪▪▪▪▪▪▪▪▪▪▪▪▪ "হিজড়া" শব্দটি একটি উর্দু শব্দ, যা সেমেটিক আরবি ধাতুমূল হিজর থেকে "গোত্র হতে পরিত্যাক্ত" অর্থে এসেছে এবং পরবর্তীতে তা হিন্দি ভাষায় বিদেশী শব্দ হিসেবে প্রবেশ করেছে। শব্দটির ভারতীয় ব্যবহারকে প্রথাগতভাবে ইংরেজিতে "ইউনাক" (Eunuch, অর্থঃ খোজা) বা "হারমাফ্রোডাইট" (hermaphrodite, অর্থঃ উভলিঙ্গ) হিসেবে অনুবাদ করা হয়। মেসোপটেমিয়ার পৌরাণিক কাহিনীতে মানবতার প্রাথমিক লিখিত রেকর্ডগুলির মধ্যে এমন ধরনের রেফারেন্স রয়েছে যা পুরুষও নয় এবং নারীও নয়। দ্বিতীয় সহস্রাব্দের একটি প্রস্তর ট্যাবলেট পাওয়া সুমেরীয় সৃষ্টি কাহিনীতে, দেবী নিনমা এমন ফ্যাশন করেছিলেন যেখানে "কোন পুরুষ অঙ্গ এবং কোন মহিলা অঙ্গ ছিলনা" যার জন্য Enki সমাজে একটি অবস্থান খুঁজে পেয়েছিল: "রাজার আগে দাঁড়ানো"। অ্যাট্রা-হাসিস (খ্রিস্টপূর্ব ১৭০০ খ্রিস্টাব্দ) এর আক্কাডিয়ান পুরাণে, পুরুষ এবং নারীদের পাশাপাশি "জনসাধারণের মধ্যে তৃতীয় শ্রেণি" প্রতিষ্ঠা করার জন্য এনকি, জন্মের দেবী নিন্তুকে উপদেশ দেয়, তাছাড়া ...

তিগোয়া হিন্দু মন্দির তিগোয়া গ্ৰাম মধ্য প্রদেশের বাহোরিবান্ডের জবলপুরের নিকটে অবস্থিত। যসেখানে বেশ কয়েকটি মন্দির রয়েছে। এই মন্দিরগুলির মধ্যে কেবলমাত্র কঙ্কালী দেবী মন্দির আজ অবধি ভালভাবে সংরক্ষণে রয়েছে। টিগোভা একটি ছোট্ট গ্রাম যা এক সময় ঝাঁঝানগড় নামে দুর্গের একটি শহর ছিল। টিগোভা বা তিগাওয়া শব্দের আক্ষরিক অনুবাদ 'তিনটি গ্রাম'। কঙ্কালী দেবীর মন্দির এবং আরেকটি বিষ্ণু মন্দির তিগাওয়া বা টিগোভা মন্দির হিসাবে পরিচিত। এই জায়গাটি পাহাড়ের কাইমুর রেঞ্জের নিকটে একটি মালভূমিতে অবস্থিত। এই অঞ্চল থেকে খননকার্যের ফলে পাওয়া গেছে নানান মৃৎশিল্প ও ইট। আলেকজান্ডার কানিংহাম ১৮৭৯ সালে অনুমান করেছিলেন যে বাহোরিবান্ড (তিগোয়া প্রায় ৪ কিলোমিটার দক্ষিণে) টলেমি থোলাবানা হিসাবে অনূদিত হয়েছিল এমন শহর হতে পারে। তিগোয়া (টিগোয়া, টিগোয়ান, তিগওয়ান) নামটি "ত্রি-গাওয়া" বা "তিনটি গ্রাম" থেকে উদ্ভূত হতে পারে, যা পাশের গ্রাম আমগোয়া এবং দেওরির উল্লেখ করে। স্থানীয় traditionতিহ্য বিশ্বাস করে যে এটির একবার দুর্গ ছিল এবং এটি প্রাচীন বাহুড়িবাঁধের শহরতলির ঝাঁঝানগড় নামে একটি বড় শহরের অংশ ছিল। এই মন্দিরে একটি গর্ভগৃহ এবং চারটি স্তম্ভ দ্বারা যুক্ত পোর্টিকো রয়েছে। পোর্টিকোটি প্যানেলযুক্ত প্রাচীর ও একটি সমতল ছাদ দিয়ে আবৃত। গর্ভগৃহের ভিতরে অবতার নরসিংহর একটি চিত্র রয়েছে। এই পোর্টিকোতে বিষ্ণু বা নারায়ণ এবং চামুণ্ডা বা কাঙ্কালী দেবীর চিত্র চিত্রিত রয়েছে। এছাড়া মন্দিরের উপরে একটি সর্পযুক্ত বৌদ্ধ তীর্থঙ্করের (সম্ভবত বুদ্ধ হবে না) একটি বৃহৎ প্রতিমা রয়েছে। তবে আমার ধারনানুযায়ী এটা কোনো তীর্থঙ্করের স্থাপত্য নয়, এটি সর্পযুক্ত বিষ্ণুর স্থাপত্য। টিগোভার স্মৃতিসৌধটিতে প্রায় ৩টি মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। তবে বর্তমানে কেবল কঙ্কালী দেবীর মন্দিরটিই দাঁড়িয়ে আছে। মন্দিরটি গুপ্ত আমলে ৫ম - ৬ষ্ঠ শতাব্দীর সময়কালে তৈরী। কানিংহাম অনুমান করেছিলেন যে মন্দিরটি প্রায় ১৯.৫ ফুট বর্গ ছিল। মন্দিরের গর্ভগৃহটি বাইরের দিকের উচ্চতা প্রায় ১২ ফুট এবং ভিতরে প্রায় ৮ ফুট বর্গ। পূর্বেই বলেছি এটি একটি সমতল ছাদ দ্বারা গঠিত। গর্ভগৃহের দরজাটি টি-আকারের কৌশল রয়েছে। মন্দিরের দরজার জামগুলি প্রবেশদ্বারটির চারপাশে এককভাবে উল্লম্ব ব্যান্ডগুলিতে খোদাই করা হয়েছে। প্রবেশদ্বারের প্রাচীরের বাম দিকে নদীর দেবী গঙ্গা একটি জলযান ধরে এবং তার কুমিরবাহানকে চড়ছেন, এবং উপরের ডানদিকে নদীর দেবী যমুনাও তাঁর কচ্ছপবাহন বেয়ে চড়ে একটি জলযান ধরে আছেন। দেবী গঙ্গা কাস্টার্ড-আপেল গাছ থেকে ফল সংগ্রহ করছেন, অন্যদিকে যমুনা একটি আমের গাছ থেকে একটি সংগ্রহ করছেন। মন্দিরের গর্ভগৃহের অভ্যন্তরে নরসিংহের একটি চিত্র রয়েছে। এছাড়া মন্দিরের মণ্ডপের পাশের দেয়ালগুলিতে বিভিন্ন ভাস্কর্যীয় প্যানেল দেখা যায়। একটি প্যানেলে চামুণ্ডা বা কঙ্কালী দেবীর চিত্র রয়েছে। আর তাই মন্দিরটি কঙ্কালি দেবীর মন্দির নামে খ্যাত। এছাড়া বিশ্রামরত ভগবান বিষ্ণুর একটি চিত্র দেখা যাবে। এখানে একটি ভাস্কর্যের প্যানেল রয়েছে যা দীর্ঘায়িত কান এবং মাথার উপরে একটি বৃহৎ মুকুটযুক্ত মানব বসা অবস্থা রয়েছে। এমন স্থাপত্য বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের ভাস্কর্যগুলিতে সাধারণত দেখা যায়। মন্দিরের অবশিষ্ট অংশগুলি পরবর্তী সময়ে নির্মিত হয়েছিল বলে মনে হয়। গর্ভগৃহটিতে দেবী দুর্গার একটি মুর্তি রয়েছে এবং সামনে বাইরের দেওয়ালটিতে ভগবান বিষ্ণু তাঁর সমস্ত অবতারের সাথে খোদাই করেছেন, যাঁরা দেবী সূর্য, দেবী চামুন্ডি এবং গণেশকে বাদ দিয়ে মূল চিত্রের চারপাশে চিত্রিত করেছেন। এই মন্দিরটির সামনে একটি বারান্দা রয়েছে যার চারটি স্তম্ভ রয়েছে। তথ্যসূত্র (১) ভারতের সাংস্কৃতিক ইতিহাস; প্রকাশ, 2005(URL) (২) হিন্দু স্থাপত্যের এনসাইক্লোপিডিয়া; প্রসন্ন কুমার আচার্য, ২০১০, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস (URL) (৩) ভারতীয় মন্দির আর্কিটেকচার; অ্যাডাম হার্ডি, 1995,অভিনব প্রকাশনা( URL) (৪) Gupta Art; Agrawala, V S 1977; Prithivi Prakashan. New Delhi. ((URL) (৫) Corpus Inscriptionum Indicarum Vol III; Bhandarkar, D R; 1981; Archaeological Survey of India; New Delhi (URL) (৬) ছবি..URL